
ছবিঃ সীমান্তের আওয়াজ
জাহিদুল ইসলাম (জাহিদ), স্টাফ রিপোর্টার— ১৮ নভেম্বর ২০২৫
জয়পুরহাটের কালাইয়ে নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বসেছে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। প্রতিবছরের মতো এবারও অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজার সংলগ্ন কালাই–মোকামতলা মহাসড়কের পাশে বসে মেলার এই প্রাণবন্ত আয়োজন। শীতের আগমনী হাওয়ায় ঘন কুয়াশার চাদরেও দমে নেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়।
ভোর থেকেই সারি সারি দোকানে সাজানো থাকে কাতলা, রুই, মৃগেল, চিতল, গ্রাসকার্প, কালবাউশ, ব্রিগেড, সিলভার কার্পসহ নানা প্রজাতির মাছ। দুই কেজি থেকে শুরু করে ২৫ কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির মাছের দামও ধরন ও আকারভেদে কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
শুধু কালাই নয়, উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর, আহম্মোবাদ ইউনিয়ন ও পৌরসভার শতাধিক গ্রামসহ দূর-দূরান্ত থেকেও নানা বয়সী মানুষ ছুটে আসেন এই মেলায়। এলাকাবাসীর ভাষায় এটি শুধু মাছের মেলা নয়—গ্রামীণ বন্ধন, আত্মীয়তার মিলনমেলা। স্থানীয়ভাবে অনেকে একে ‘জামাই মেলা’ও বলে থাকেন, কারণ জামাইয়ের জন্য বড় মাছ কিনে নেওয়াই অনেক পরিবারের ঐতিহ্য।
মেলায় ঘুরতে আসা রিয়া মুনি বলেন, “প্রতিবছরই নবান্ন উপলক্ষে এই মেলার আয়োজন হয়। মানুষ নানা জায়গা থেকে এসে দরদাম করে মাছ কেনেন। পরিবেশটা খুবই উৎসবমুখর।”
মাছ কিনতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, “এবার দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। তবুও শ্বশুরবাড়ির জন্য মাছ না নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
মাছ বিক্রেতা আব্দুল লতিফ জানান, “বড় পুকুর, দিঘি ও নদী থেকে সংগ্রহ করা নানা জাতের বড় বড় মাছ এই মেলায় আনা হয়েছে। সাইজ অনুযায়ী দামের ভিন্নতা রয়েছে, তবে বিক্রি ভালোই হচ্ছে।”
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম জানান, “নবান্ন উৎসব উপলক্ষে পাঁচশিরা বাজারে এ মেলা বসেছে। প্রায় ২৫–৩০টি দোকান অংশ নিয়েছে। মেলা ঘিরে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।”
নতুন ধান ওঠার আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার এ নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে কালাই উপজেলায় তৈরি হয়েছে আনন্দমুখর পরিবেশ। পিঠা-পুলি, পায়েস, খই-মুড়ির সঙ্গে মাছের মেলা যুক্ত হয়ে উৎসবকে দিয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া।