জয়পুরহাট জেলার ২টি সংসদ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী এক ডজন, জামায়াতের ২, এবি পার্টি ১, ই. আন্দোলনের ২
প্রতিনিধির নাম :
-
প্রকাশিত:
শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫
-
৩৫
বার পড়া হয়েছে

জয়পুরহাটের দুটি আসনে বিএনপির প্রায় এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী, জামায়াতের ২ জন, এবি পার্টির ১ জন, ই, আন্দোলনের ২ জন মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই দুটি আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জেলার দুটি সংসদীয় আসন বিএনপির দখলে ছিল। এরপর আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মোজাহার আলী প্রধান ও জয়পুরহাট-২ আসনে গোলাম মোস্তফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মোজাহার আলী প্রধান মারা গেছেন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তাঁর ছেলে মাসুদ রানা প্রধান এখন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের পদে আছেন।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ছোট জেলা। জয়পুরহাট রাজনৈতিকভাবে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মাত্র দুটি আসন থাকলেও এ জেলার রাজনীতিতে জাতীয় পর্যায়ের বড় দলগুলোর উপস্থিতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবসময়ই তীব্র। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে জয়পুরহাট-১ ও জয়পুরহাট-২ আসন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ বাড়ছে, পাশাপাশি প্রার্থীদের কৌশল, দলীয় অবস্থান ও স্থানীয় ইস্যুগুলোকে ঘিরে গড়ে উঠছে নানামুখী আলোচনাও।
প্রতি নির্বাচনের মৌসুমে প্রার্থী আর ভোটারের সম্পর্ক যেন এক বিশেষ সামাজিক চুক্তির প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। প্রার্থী ভোট চায়, ভোটার প্রত্যাশা করে উন্নয়ন, নিরাপত্তা আর সামাজিক মর্যাদা। কিন্তু এই লেনদেন কেবল রাজনীতির ভেতর সীমাবদ্ধ নয়—এটি আমাদের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন। শহর ও গ্রামে কর্মসংস্থানের সংকট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য, কিংবা মূল্যস্ফীতির চাপ—সবকিছুই ভোটারের পছন্দ-অপছন্দকে প্রভাবিত করে। ফলে ব্যালট বাক্সের ভেতরের প্রতীকী সিদ্ধান্ত আসলে আমাদের সমাজের আর্থসামাজিক টানাপোড়েন, আশাবাদ ও হতাশার একত্রিত চিত্র।
প্রার্থী তাই শুধু রাজনৈতিক প্রতিনিধি নন, তিনি এক অর্থে ভোটারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সামাজিক অবস্থানের প্রতিশ্রুত প্রতিফলনও হয়ে ওঠেন।
অর্থনীতির উন্নয়ন মানে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আয় বাড়ানো, দারিদ্র্য হ্রাস ও জীবনমান উন্নয়ন স্থিতিশীল অর্থনীতি স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করে। উৎপাদন, বাণিজ্য, শিল্প ও প্রযুক্তি নির্ভর উন্নয়ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। একটি সুস্থ জাতি অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতার জন্য অপরিহার্য। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করলে কর্মক্ষমতা বাড়ে, চিকিৎসা খরচ কমে এবং আয়ু বাড়ে। জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, টিকা কার্যক্রম ও স্বাস্থ্য সচেতনতা উন্নয়ন সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে সাহায্য করে।
শিক্ষাই দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে ওঠে, যা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে অবদান রাখে। স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি দুটোই শিক্ষার উপর নির্ভরশীল পেশাগত দক্ষ। অর্থনীতি শক্তিশালী না হলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগ সম্ভব হয় না, আবার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নত না হলে অর্থনীতিও টেকসইভাবে বাড়তে পারে না। এসব ভাবনা নতুন প্রজন্মের ভাবনা। তাই ভোট হচ্ছে জটিল সমীকরণ। আশা নিরাশার দোলাচালে শেষ হাসি তা ভাগ্য বিধাতা বলতে পারে। এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি চুলচেরা বিশ্লেষণে তৈরি করেছেন এ প্রতিবরদন।
জয়পুরহাট উপজেলা ও পৌর বিএনপির কাউন্সিলে দলীয় কোন্দলের কারণে ফয়সাল আলীমের নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীরা সেসব কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
দীর্ঘদিন পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএনপির বিশাল সমাবেশে উভয় গ্রুপ অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ থেকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি জানানো হয়। পাঁচবিবি উপজেলায়ও দলটি দু’ভাগে বিভক্ত। পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডালিম ও সেক্রেটারি আব্দুল হান্নান বর্তমান জেলা আহবায়ক কমিটির অনুসারী। অপরদিকে ফয়সল আলিমের অনুসারী কুসুম্বা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল গফর মণ্ডল। তিনিও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তারা সবাই আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
জয়পুরহাটের দুটি আসনেই জামায়ােত ইসলামীর দুই প্রার্থীর ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জয়পুরহাট ১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন জয়পুরহাট জেলা জামায়াতের আমীর কেন্দীয় মজলিশে শুরার সদস্য ফজলুর রহমান। জয়পুরহাট -২ আসনে প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর জয়পুরহাট জামায়াতের সহকারী সেক্রটারী ও সাবেক আক্কেলপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সবুজ। প্রার্থী ঘোষণা করে ব্যাপকভাবে নির্বাচনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। তারা নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতা-কর্মীদের নির্বাচনি সব রকম প্রশিক্ষন শেষ করা হয়েছে এবং নির্বাচনের সব প্রস্তুতি তাঁরা নিয়েছেন। নির্বাচনে তাঁরা জয়ী হবেন বলে আশাবাদী।
জয়পুরহাট-১ (সদর ও পাঁচবিবি)
১৯৯১ থেকে জয়পুরহাটের দুটি আসনই বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালেও বিএনপি মনোনীত জয়পুরহাট-১ ও মোজাহার আলী প্রধান এবং জয়পুরহাট-২ আসনে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোয়ফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪, ১৮ এবং ২৪-এ নির্বাচনে আসন দুটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ । আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ সংগঠন হওয়ায় তারা মাঠে নাই।
বিএনপির করেকজন সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী গণসংযোগ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই বিএনপির ৫ নেতা দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তারা হলেন- জেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ গোলজার হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলিম, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মাসুদ রানা প্রধান, বিশিষ্ট শিল্পপতি আনোয়ারুল হক আনু, এবং পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জয়পুরহাট জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য আন্দুল গফুর মন্ডল। তারা গণসংযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
জয়পুরহাট ১ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলজার হোসেন জানিয়েছেন, তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, যুবদলের নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। তিনি কয়েকবার পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্যানেল মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৫ বছর জুলুম-নির্যাতন ও গণসংযোগে আছেন দীর্ঘদিন। তিনি হাসিনা পতনের আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়। দলের জন্য এই নেতার পারিবারিক অবদানের কথা নেতাকর্মীদের আলোচনায় স্থান পায়। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তার পরিবারকে।
জয়পুরহাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জেলা বিএনপি নেতা মমতাজ উদ্দিন মন্ডলের বড় ছেলে বিশিষ্ট শিল্পপতি জয়পুরহাট চেম্বাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল হক আনু মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। এই নেতা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন অতান্ত জরুরি। দেশের জন্য সব নাগরিকের কাজ করার সময় এসেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
পাঁচবিবি গণমানুষের নেতা সাবেক পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপি সভাপতি নির্যাতিত ও কারাভোগী আব্দুল গফুর মন্ডলও মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানিয়েছেন। প্রত্যেক নেতাই অনুসারীদের নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জয়পুরহাট আইন বিষয়ক সম্পাদক জানান, জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ জয়পুরহাট ১ আসন থেকে দাঁড়াবেন। সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান মাহমুদ জয়পুরহাট-২ আসন থেকে দাঁড়াবেন। তিনি আরো বলেন, সব ইসলামী দল ঐক্যবদ্ধভাবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। দলীয় ভাবে মনোয়ন দিলে আমরা ২টি আসনে প্রার্থী দেয়া হবে। আর ইসলামী দলগুলো ঐক্য হলে যাকে মনোনয়ন দেওযা হবে তিনিই আমাদের প্রার্থী।
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি) মনোয়ন পেয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন আল-হেরা স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক অধ্যক্ষ সাবেক সংগ্রামী ছাত্র নেতা সুলতান মোঃ শামসুজ্জামান।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিসি) থেকেও প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও আরো যারা আলোচনায় আছেন মোঃ উজ্জ্বল প্রধান, লন্ডন প্রবাসী তানজিদ আহমেদ তাজ।
জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর)
১৯৯১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনটিও বিএনপির দখলে ছিল। এ্যাড. খলিলুর রহমান ১৯৯১ এবং ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এই আসনে বিএনপির সব হেভিওয়েট প্রার্থী যা উত্তরবঙ্গের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, নির্যাতিত সাহসী সম্মুখ যোদ্ধা মৃত্যুঞ্জয়ী সাবেক ছাত্রনেতা আববাস আলী, সাবেক সচিব চৌকস সিভিল সার্ভেন্ট আবদুল বারী, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, কেন্দ্রীয় কৃ
ষকদলের পানি বায়বিষয়ক সম্পাদক ও শিল্পপতি লায়ন সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ।
এছাড়াও যারা আলোচনায় আছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও সমাজসেবক জাহেদুল আলন হিটো, বিশিষ্ট সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর ইসলাম (সিআইপি)।
যার যার কর্মী অনুসারী নিয়ে নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
Like this:
Like Loading...
Related
আরো সংবাদ পড়ুন